Pegasus Spyware ফোনে যাই করুন ভেবেচিন্তে করুন আপনাকে কেউ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

Pegasus Spyware ফোনে যাই করুন ভেবেচিন্তে করুন আপনাকে কেউ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।



য‌দি বলি আপনার ওয়াশরুম থেকে শুরু করে অফিস পর্যন্ত

কখন কি করছেন  কাকে ভিডিও কল করছেন?
কাকে অডিও কল করছেন? কাকে মেসেজ করছেন?
কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ কত লাখ টাকার ডিপোজিট করেছেন। আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কবে ডেট করেছেন,
ভিডিও অডিও ছবি সহ সব নথি তৃতীয় পক্ষের কাছে রয়েছে।
যে মুহূর্তের মধ্যে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে।
গুম করতে পারে, আপনার সব ডকুমেন্টারি অপব্যবহার করতে পারে। সে চাইলে আপনাকে কন্ট্রোল করতে ও পারে।  যার কাছে, আপনার পার্সোনালিটি বলতে কিছুই নেই।
তাহলে কি বিশ্বাস করবেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে একটু পরে আসবো।
আগে জেনে নেই, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া
কিছু ঘটনার, উত্তর আমাদের কাছে আছে কিনা?
আচ্ছা বলুন তো, কিছুদিন পরপর বিভিন্ন ব্যক্তির কল রেকর্ড, ভিডিও ক্লিপস, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং, মেসেঞ্জার চ্যাটিং ফাঁস হয়ে যায়।
কে বা কারা করে এইসব?
এই তথ্য ফাঁস হওয়ার আড়ালে কে কলকাঠি নাড়াচ্ছে?
এত নিরাপত্তার ভিতরে, থাকার পরেও, কিভাবে এই ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ফাঁস হচ্ছে? তাহলে  কি কেউ, আগে থেকেই, তাদের পিছনে, সিসি ক্যামেরা ফিট করে রেখেছিল?  কথা হচ্ছে যেখানে কেউ ছিলনা, ছিলনা কোন সিসি ক্যামেরা, সেখানে তোলা আমার একটি personal ছবি, কিভাবে তৃতীয় পক্ষে কাছে গেল?
তাহলে প্রশ্ন আসে কে সে? কিভাবে আমার সব ব্যক্তিগত তথ্য তার কাছে যাচ্ছে? আর কিভাবে সে আমাকে কন্ট্রোল করছ? আমি কিভাবে তার কাছ থেকে মুক্তি পেতে পারি? 
বিস্তারিত জানব আজকের বিশেষ প্রতিবেদন রহস্যে প্রথম পর্বে।

এতক্ষণ ধরে, যা কিছু বলছিলাম,
এই সবকিছুই করছে, অজানা, অদেখা, একটা শত্রু।
এই ভয়ংকর শত্রুর নাম পেগাসাস।
এটি একটি স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার । হয়তো ইতিমধ্যে  এই নামটি অনেকে শুনেছেন।
কারণ ২০২১ সালের জুলাই মাসে 17 টি মিডিয়া সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি যৌথ তদন্তে উঠে আসে এই ভয়ঙ্কর শত্রুর কথা।
তখনই সারা বিশ্বজুড়ে, একযোগে  ,
আলোচনা এসেছিল, এই  এই গোপন নজরদারি অ্যাপ্লিকেশন টি ।
এটি ইসরাইলি কোম্পানি NSO Group একটি ডিজিটাল প্রোডাক্ট।
যদিও তারা প্রথমদিকে কোনভাবেই স্বীকার করতে চাইনি যে এটি তাদের তৈরি করা ডিজিটাল প্রোডাক্ট। এখন তারা দাবি করে যে, তারা এমন সব প্রযুক্তি তৈরি করে যা সরকারি সংস্থাগুলোকে সাহায্য করে সন্ত্রাস ও অপরাধ দমন এর জন্য।  বাস্তব অর্থের এটি ব্যবহার হয়  সমালোচক এবং বিরোধীদের ওপর, গুপ্তচর বৃদ্ধি করার জন্য। কর্তৃত্ববাদী এবং গণতান্ত্রিক উভয় সরকারি ব্যবহার করছে।
সময়ের পরিবর্তে এই হ্যাকিং অ্যাপস শক্তি থেকে মহা শক্তিতে রূপান্তর হচ্ছে, বিস্তার করেছে বংশবৃদ্ধি।
প্রতিটা মুহূর্তে মুহূর্তে নতুনভাবে নতুন রুপ আবিষ্কার করছে নিজেকে।
ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত বলে কোন কিছু থাকবে কিনা, এটি নিয়েও  উদ্বিগ্নই রয়েছে অনেকে।
আরো দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এর কোন শারীরিক অস্তিত্ব নেই যা   থেকে চিহ্নিত করা যাবে যে এই মহা ভাইরাস আপনার ফোনে আছে।
কবে কিভাবে আপনার ফোনে ইনস্টল হবে আর আপনার অজান্তেই যাবতীয়  তথ্য পাচার করবে আপনি নিজেও জানবেন না। তবে আপনার যদি পেগাসাস সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে তাহলে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

২০১৬ সালে যখন প্রথম পেগাসকে আবিষ্কার করা হয়েছিল,
তখন একটি বর্ষা ফিশিং আক্রমণের ওপর নির্ভর করেছিল,  যার জন্য টার্গেটেড ব্যক্তিকে একটি মেসেজ  বা ইমেইল পাঠাতো এবং সেখানে একটি  click able লিংক যুক্ত থাকত। সেই লিংকে ক্লিক করলে টার্গেটে ব্যক্তির ফোনে পেগাসাস অটোমেটিক ইন্সটল হয়ে যেত।

আগস্টের ২০১৬ সালে একজন প্রাক্তন NSO কর্মচারীর মতে,  মার্কিন সংস্করণ ব্ল্যাকবেরির ফোনগুলো  ছাড়াও সমস্ত ফোনের জন্য 1 ক্লিক ক্ষমতা ছিল পেগাসাসের,  যা আপডেট করে 0 ক্লিকে আক্রমণের অনুপ্রবেশ করা যেতে পারে।
২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রকাশ করে যে, পেগাসাস শুন্য ক্লিকে আক্রমণ শুরু করার জন্য,  তার অ্যাপে (মানে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপস এ)একটি দুর্বলতা নিযুক্ত করেছে। এবং এই স্পাইওয়ার টার্গেটেড ফোন কে কল করার মাধ্যমে ওই ফোনে পেগাসাস ইন্সটল করবে যদি আপনি কল রিসিভ করেন তবু অটোমেটিক ইনস্টল হবে যদি রিসিভ নাও করেন তবুও পেগাসাস আপনার ফোনে ইন্সটল হবে।
এবং একই সময়ে আইফোন অ্যাটাক করার জন্য
আইফোন আই মেসেজের একটি দুর্বলতার উপর তারা নির্ভর করেছিল।
অনেকেই ভাবতে পারেন আইফোন তো বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফোন এবং এর নিরাপত্তার দিকে কঠোর। তাদের জন্য দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পেগাসাস সর্বপ্রথম আইফোনকে অ্যাটাক করেছিল।

আরো ভয়াবহ দিক হলো ২০২০ সালে এটি আরো বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে শুন্য ক্লিকে আক্রমণ শুরু করার পাশাপাশি  এটি নেটওয়ার্ক ভিত্তিক আক্রমণের দিকে চলে যায়।  এবং এই পদ্ধতিতে টার্গেটেড ব্যক্তির ভূমিকার প্রয়োজন ছাড়াই, এবং কোন সনাক্ত যোগ্য চিহ্ন ছাড়াই টার্গেটেড ফোনে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সম্মেলনে, গবেষকরা প্রকাশ করেছেন যে, পেগাসাস আইওএস ছাড়াও android এর জন্য ও ব্যবহৃত হয়। এর কার্যকারিতা iOS এর সংস্করণের মতো তবে আক্রমণ মুড ভিন্ন।
এটি প্রথমে এন্ড্রয়েড সংস্করণে রুট এক্সেস লাভ করার চেষ্টা করে এরপর যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যবহারকারীর কাছে অনুমতি চায় যা অন্তত কিছু ডাটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম ।
সেই সময় গুগল বলেছিল যে শুধুমাত্র কয়েকটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু সত্য কথা হলো এই যে, ওই সময়ই  হাজার হাজার ফোনে এগাসাস আক্রমণ করেছিল ‌।

পেগাসাস যতদূর সম্ভব নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে সে কম্যান্ড অ্যান্ড কনট্রোল সার্ভার এর সাথে যোগাযোগ করতে না পারলে বা ভুল ডিভাইসে থাকলে প্রমাণ বাদ দেওয়ার প্রয়াসে আত্ম ধ্বংস করে। পেগাসাস ও আদেশ স্ব-ধ্বংস করতে পারে।
২০২১ সালের জুলাই মাসে 17 টি মিডিয়া সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি যৌথ তদন্তে দেখা গেছে যে, পেগাসাস স্পাইওয়্যার টি রাষ্ট্রপ্রধান কর্মী, সাংবাদিক এবং ভিন্ন মতলম্বীদের  লক্ষ্যবস্তু ও গুপ্তচর বৃত্তি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান আরো বলেছিলেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার টির বেশি ফোন নাম্বারের একটি তালিকা রয়েছে যা ২০১৬ সাল থেকে NSO ক্লাইন্ট দ্বারা আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করে। তদন্তে ১১ টি দেশকে NSO ক্লাইন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছিল আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, ভারত, কাজাকিস্তান, মেক্সিকো, মরক্ক, োয়ান্ডা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ।  তদন্তে আরো জানা গেছে যে আল জাজিরা, CNN, দ্যা ফিনান্সিয়াল টাইমস, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস দা নিউ ইয়র্ক টাইমস, দা ওয়ার্ল্ড স্টেট জার্নাল, বলুমবাগ নিউজ এবং লেমেন্ডে সহ একাধিক মিডিয়া সংস্থার সাংবাদিককে লক্ষ্য করা হয়েছিল এবং বিশ জনের তদন্তে 180 জন সাংবাদিককে চিহ্নিত করা হয়েছিল।  যে দেশগুলি 2016 সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে NSO এস আই অয়ারের দিকে লক্ষ্য করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।

পেগাসাস এতটাই মারাত্মক, আক্রমণ মুখী হ্যাকিং অ্যাপস যা একবার আপনার ফোনে ইন্সটল হলে, আপনার পুরো ফোনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। আপনার অজান্তেই ভিডিও রেকর্ড করে, অডিও রেকর্ড করে, আপনার ফোনে যে অ্যাপসগুলো ইন্সটল করা আছে সব এপস এর ডাটা কালেক্ট করে। নরমাল এসএমএস হোক, হোয়াটসঅ্যাপ হোক, আইফোনের আই মেসেজ, গুগল ড্রাইভই হোক, মানে টোটাল ইনফরমেশন সরাসরি তার সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি ফোনে থাকা আপনার পার্সোনাল এসডি কার্ডের ইনফর্মেশন গুলো পাঠিয়ে দেয়। এক কথায় এই ফোন দিয়ে আপনি যা যা করবেন সব ডাটা তার কাছে থাকবে প্লাস ফোন নিয়ে যেখানে যাবেন তার আশে পাশের ছবি ভিডিওসহ লোকেশন ট্রাক করে। কাজেই যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে খুন করা বা গুম করা তাদের জন্য ব্যাপারই না।

ফোন তো আপনার কাছে ব্যবহারও করছেন আপনি তাহলে সে কিভাবে এত ডকুমেন্ট আর সার্ভারে পাঠায়?
কথা হচ্ছে যারা iphone ইউজ করে বান্ড্রেড ফোন ইউজ করে সবাই এমবি কিংবা ওয়াইফাই ইউজ। সো আপনি ইন্টারনেট কানেকশন এর ভিতরে আসলেই সে বিদ্যুৎ গতিতে আপনার সব ইনফরমেশন তার সার্ভারে পাঠায়।

কিভাবে বুঝব যে আমার ফোনে টাকা চার্জ অ্যাটাক করেছে কিনা?
যদি আপনি ডাটা প্যাক ব্যবহার করেন সেই ডাটাতে যদি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়,
এবং আপনার ফোনের ব্যাটারি যদি ব্যাকআপ কম দেয়। মানে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায়। তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনে এই ভাইরাস চলে এসেছে।

কিভাবে পরিত্রান পাবেন?
যেহেতু একে দেখা যায় না বোঝাও যায় না এর অবস্থান কোথায়।
কাজেইএই মহামারী শত্রুর হাত থেকে বাঁচার কোন রাস্তা নেই।
যদি আপনি ফ্যাক্টরি রিসেট দেন তাহলেও পেগাসাসের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না।
এর একটাই সমাধান  আপনাকে ওই ফোনটা ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে।

JF Anika

যদি এই ওয়েবসাইটে লেখাগুলো ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। এবং আমাদের পাশে থাকবেন। আল্লাহ আপনাদের সকলের মঙ্গল করুক। (আমিন)

Thanks for reading my writing, JF Anika.

ধন্যবাদ আমার লেখা গুলো পড়ার জন্য, জে.এফ আনিকা।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post